বিবাহের সংজ্ঞা ? মুসলিম বিবাহ আইন

বিবাহ

বিবাহ হলো শরীয়ত এর একটি বিধান। আরবী ‘নিকাহ’ শব্দের বাংলা অর্থ হলো বিবাহ, ইংরেজীতে Marriage বলা হয় । নিকাহ এর শাব্দিক অর্থ হলো একত্রিত হওয়া, নারী পুরুষ মিলিত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিকাহ বা বিবাহ বলা হয়। একজন পুরুষ ও একজন ারীবহ মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে এই বিধান পালিত হয়।

 

মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহ, বিবাহ হচ্ছে একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি যদ্দ¦ারা যা উভয়ের মধ্যে সন্তোগ ও সন্তান লাভ চিরস্থায়ীভাবে বৈধকরণ করে। 

উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, ইসলামী শরীয়াহ আইন অনুযায়ী বিবাহ হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিস্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি।

বিবাহের ক্ষেত্রে অবশ্যই দুইজন পুরুষ স্বাক্ষী থাকতে হবে অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী স্বাক্ষী থাকতে হবে। বিবাহের সংজ্ঞার আনুষ্ঠানিকতায় যদিও বিবাহকে একটি বিধানিক চুক্তি বলা হয়, তবুও প্রকৃতপক্ষে ইহা নিছক একটি চুক্তি নয়। কারণ যে কোনো চুক্তি সাময়িককালের জন্য হতে পারে, কিন্তু বিবাহের চুক্তি যাবজ্জীবনের জন্য।

মুসলিম আইনে বৈধ বিবাহের অপরিহার্য উপাদানঃ

মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। যার ফলে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাসের এবং তাদের সন্তানসমূহের বৈধ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মুসলিম আইনে বৈধ বিয়ের অপরিহার্য উপাদান সমূহ বর্ণনা করা হলোঃ

  • সাবালকত্বঃ বর ও কনে উভয়কেই সাবালক হতে হবে। শরিয়া আইন মোতাবেক ১৫ বছর পূর্ণ হলে সাবালক ধরা হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক।
  • সুস্থ্য মস্কিস্ক সম্পন্নঃ বর ও কনে উভয়কে সুস্থ্য মস্তিস্ক সম্পন্ন হতে হবে। শরিয়া আইন অনুসারে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগল ব্যক্তির বিয়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত বিধিবদ্ধ আইন (মুসলিম পারিবারিক আইন) অনুযায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • প্রস্তাব প্রদানঃ বিয়ের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। সাধারণত বরের পক্ষ হতে কনের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়।
  • প্রস্তাব গ্রহণঃ বিয়ের জন্য আনুষ্ঠানিত ভাবে প্রস্তাব প্রদান করতে হবে। যে পক্ষ বিবাহের জন্য প্রস্তাব প্রদান করবে অন্য পক্ষ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করবে অথবা প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করবে।
  • স্বাক্ষীঃ দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার সম্মুখে এরূপ প্রস্তাব ও স্বীকৃতি সম্পন্ন করতে হবে।
  • মোহরানাঃ বর কর্তৃক কনেকে প্রদেয় মোহরানা বৈধ বিয়ের অন্যতম শর্ত। মোহরানা হচ্ছে অর্থ বা অন্য কোনো সম্পত্তি যা স্ত্রী স্বামীর নিকট হতে বিয়ের মূল্যস্বরূপ পাবার অধিকারী।
  • নিষিদ্ধ সম্পর্ক পরিহারঃ মুসলিম আইনে বৈধ বিবাহের আরেকটি অপরিহার্য উপাদান হলোÑ যে সকল নারীদের বিবাহ করা হারাম তাদেরকে বিবাহ না করা। যেমন, মাতা, দুখ মাতা, কন্যা, আপনবোন, দুধ বোন, ফুফু, খালা, আপন ভাইয়ের মেয়ে, আপন বোনের মেয়ে, স্ত্রীর মাতা, স্ত্রী জীবিত অবস্থায় তার আপন বোন, স্ত্রীর পূর্বে বিবাহ থাকলে সেই ঘরের মেয়ে, পুত্রের স্ত্রী, সধবা নারী (যার স্বামী আছে)। এগুলো ছাড়াও জ্ঞাতিত্বের কারণে ও ধাত্রীত্বের কারণে কিছু কিছু বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোও পরিহার করা উচিত।
  • রেজিষ্ট্রেশনঃ ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী বিয়ের কাবিন নামা বা চুক্তিপত্র কাজি বা নিকাহ রেজিস্টার কর্তৃক রেজিষ্ট্রি করতে হবে। ইহা যদিও বাধ্যতামূলক তবুও এর অবর্তমানে বিয়ে অবৈধ হবে না।
উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় আলোচিত উপাদানগুলোর মধ্যে ইজাব/প্রস্তাব প্রদান, কবুল/প্রস্তাব গ্রহণ ও মোহরানা বিবাহের অপরিহার্য উপাদান এবং অন্যান্যগুলো সম্পূরক।

লেখক:
তাপস কুমার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
Tags

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad