মুসলিম আইন কাকে বলে ?

মুসলিম আইন কি ?

সাধারণ অর্থে আইন বলতে আচরণবিধি বুঝায় যা সার্বভৌম কর্তৃক বলবৎ করা হয়। ইসলামি দৃষ্টিতে এর অর্থ ভিন্নতর। মানুষের তৈরি আইন ইসলামি আইনতত্তে¡ স্বীকৃত নয়। মূলত ইসলামি আইনকে ‘শরীয়ত’ বলা হয়। ‘শরীয়ত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পানির সন্ধান দানকারী। ইসলামি দৃষ্টিতে যে বিশেষ অর্থে পানির সন্ধান দানকারী ব্যবহৃত হয় তা হলো আল্লাহর নির্দেশিত পথ। অথাৎ আল্লাহর হুকুমই হচ্ছে আইন। প্রকৃতপক্ষে ইসলামি মতানুসারে পবিত্র কোরআনে বিবৃত আল্লাহর হুকুমসমূহ এবং রাসূলের নির্দেশিত পথই হচ্ছে আইন।


মুসলিম আইনের প্রামান্য সংজ্ঞাঃ

স্যার আবদুর রহিমের মতে, ‘মুসলিম আইন’ হলো একজন মুসলমানের সর্ব ব্যাপারে ধর্ম কিংবা নৈতিকতাবোধ যা স্বয়ং আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত’।

মুসলিম আইন বিশারদ কুলসনের ভাষায়, আল্লাহর ঐশী ইচ্ছার প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ প্রকাশই হচ্ছে মুসলিম আইন, যা মুসলিম সমাজের নিয়ন্ত্রক এবং ইসলামি রাষ্ট্রের দিক নির্দেশক।

পরিশেষে বলা যায় মহান আল্লাহর বাণী, রাসূল (সা.) এর হাদীস ইসলামি আইনের মূল উৎস। অথাৎ একজন মুসলিমের ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে যে বিধান রয়েছে তাই হলো ইসলামিক আইন।

মুসলিম আইনের বৈশিষ্ট্য কি কি?

  • আল্লাহ কতৃক প্রেরিত সংবিধানঃ ইসলামী আইন মহান আল্লাহ কর্তৃক মানুষের প্রতি প্রেরিত সংবিধান, যা মানুষের আর্থিব ও অপার্থিব জগতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
  • আল্লাহর নির্দেশ ও মহানবীর আদর্শ বাস্তবায়নঃ মানুষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত কর্মকান্ডে আল্লাহর নির্দেশকে ও মহানবীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করাই ইসলামী আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে অভিহিত করা হয়।
  • ঈমান ও বিশ্বাসঃ ঈমান ও বিশ্বাস হলো ইসলামী আইনের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
  • গোপন অপরাধের প্রবণতা কমানোঃ ইসলামী আইন সমাজে লোকচক্ষুর অন্তরালে সংঘটিত অপরাধের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে এবং সৎ কাজ করতে উৎসাহ দান করে।
  • ধর্ম নির্ভর ও নৈতিকতা ভিত্তিকঃ মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল প্রকার কর্মকান্ডে আল্লাহর নির্দেশকে এবং রাসূলের আদর্শকে বাস্তবায়নই ইসলামি আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই বলা যায় এই আইন ধর্ম নির্ভর এবং নৈতিকতা ভিত্তিক।
  • শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ ইসলাম শব্দের অর্থ আইন। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ইসলাম তথা ইসলামী আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ইসলামী আইন শুধু ইহ জীবনের জন্যই নয় পরকালেও যেন প্রতিটি মানুষ মুক্তি লাভ করে জান্নাত লাভের মাধ্যমে অনাবিল শান্তি লাভ করতে পারে সেই বিষয়েও বিধান দিয়েছে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা ইসলামি আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত।
  • অন্য আইন থেকে আলাদাঃ ইসলামী আইন মানুষের দুই জীবনের জন্য’ই প্রযোজ্য। অথাৎ জীবিত অবস্থায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হবে তা যেমন এই আইনে উল্লেখিত রয়েছে, একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর তার কি হবে তাও ইসলামী আইনে লিপিবদ্ধ রয়েছে। যার ফলে এই আইন দেশে প্রচলিত অন্য আইন থেকে পৃথক বা আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল।
  • অন্য ধর্মেও প্রতি সহানুভূতিঃ ইসলামী আইন শুধু মুসলিম বা ইসলাম ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, অন্যান্য ধর্মের প্রতিও সহানুভূতিশীল। ইসলামী আইন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সহঅবস্থানকে সমর্থন করে। ইসলাম অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর কোন বিধান চাপিয়ে দেয় না। সকলে তার ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে; এটি ইসলামী আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  • মুসলিমদের ইসলামী আইন পালনে বাধ্য করাঃ ইসলামী আইন অন্য ধর্মের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণ না করলেও মুসলিমদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই আইন পরকালীন জীবনের কঠিন শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে অন্যায় কাজ থেকে মুসলিমদেরকে দূরে রাথে। যার ফলে মুসলিমগণ পরকালীন শান্তি থেকে রক্ষা পেতে এই আইন পালণে বাধ্য হয়।
  • ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠাঃ ইসলামী আইনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর বিধান ও রসূল (সা.) নির্দেশিত পথ সমাজে প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ইহকালে যেমন শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে তেমনি পরকালেও শান্তি লাভ করা যাাবে।
  • মানব সৃষ্ট আইন হতে আলাদাঃ ইসলামি আইন মূলত ঐশ্বরিক। আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলের উপদেশ ছাড়া মানুষের তৈরি আইনের কোন স্বীকৃতি এখানে নেই। কিন্তু আধুনিক আইন ধর্ম নিরপেক্ষ। মানব সমাজে প্রচলিত সকল আইনই এর বিষয়বস্তু। তার বলা যায় ইসলামিক আইন মানব সৃষ্ট আইন হতে সম্পূর্ণ আলাদা এবং এটি ইসলামিক আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হিসেবে প্রকাশিত।
  • পরকালের বিশ্বাসঃ ইসলামী আইনের মূল উদ্দেশ্য ইহকাল নয়, পরকালই ইসলামী আইনের মূল উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, মানুষ এবং জীনকে তিনি তার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অথাৎ মানুষ পার্থিব জীবনের সকল কাজ তার নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করবে এবং পরকালে মুক্তি লাভ করবে এটিই ইসলামি আইনের উদ্দেশ্য।

উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় ইসলামী ব্যবহারতত্ব বা আইনবিজ্ঞান হলো একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সুন্দর ও বিকশিত আইন। যার তুলনায় অন্যান্য পার্থিব আইন অসম্পূর্ণ ও মুসলিম আইনের মুখাপেক্ষী।



লেখক:
তাপস কুমার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
Tags

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad