আপনি কি জানেন টিন সার্টিফিকেট কি? ইংরেজীতে TIN এর অর্থ হলো Tax Identification Number. অথাৎ কর পরিচিতি নম্বর। ধরুন আপনি একজন করদাতা। তাহলে আপনার অবশ্যই একটি টিন সার্টিফিকেট থাকবে এবং আপনি উক্ত সার্টিফিকেট নম্বর এর বিপরীতেই আপনার কর দাখিল করে থাকেন।টিন নম্বর বেশ কয়েকটি নম্বরের হয়ে থাকে। উল্লেখিত নম্বরগুলোর মধ্যে প্রথম ৩টি সংখ্যা করদাতার কর অঞ্চল, পরের ৩টি সংখ্যা দ্বারা ওই করদাতার পদমর্যাদা এবং বাকি ৪টি সংখ্যা দ্বারা করদাতার পরিচিতি চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অথাৎ টিন সার্টিফিকেট ১০ সংখ্যার হয়ে থাকে।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার হয়:
আপনি চাকুরি করেন অথবা ব্যবসা করেন আপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে। আপনার আপনি চাকুরিও করেন আবার ব্যবসাও করেন না তাও আপনার এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে। মূলত বিভিন্ন কারণে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়ে থাকে তন্মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
- বড় ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
- গাড়ি ক্রয় করে নিজ নামে মালিকানা করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
- ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- যেকোন ধরনরে সঞ্চপত্র ক্রয় করতেও টিন সার্টিফিকেট এখন বাধ্যতামূলক।
- যে কোন ধরনের পন্য আমদানির লাইসেন্স গ্রহণ করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- বড় ধরনের ব্যাংক লোড গ্রহণে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- নির্বাচনে প্রার্থী হতেও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
- চাকুরি করলেও কর এর আওতায় থাকলে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- এছাড়াও রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে গাড়ি দিতেও এখন টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
- উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও এখন আরো অনেক কিছুতে এই টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধাসমূহ:
টিন সার্টিফিকেট নিলে যে শুধু ঝামেলায় পড়তে হবে বিষয়টা এমন নয়। টিন এর ও অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমেই বলবো ধরুন আপনার কোন ব্যাংক এ বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় করা আছে বা এফডিআর করা আছে। এখন একটা নির্দিষ্ট সময় পার করার পর ব্যাংক আপনাকে বেশ কিছু মুনাফা দিবে। কিন্তু সেই মুনাফা দেওয়ার সময় আপনার যে পরিমাণ টাকা প্রদান করা হবে তার থেকে ১৫% হারে ভ্যাট কর্তৃন করা হবে। কিন্তু আপনি যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট দেখান অথবা একাউন্ট এ যুক্ত করে রাখেন তাহলে আপনার নিকট থেকে মাত্র ১০% হারে ভ্যাট কর্তৃন করা হবে। এছাড়াও আপনি যদি কোন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় ধরনের কোন লোন গ্রহণে ইচ্ছুক হন তাহলে এই টিন সার্টিফিকেট ছাড়া আপনি ৩,০০,০০০/- টাকার অধিন লোন গ্রহণ করতে পারবেন না এই টিন সার্টিফিকেট ছাড়া।
টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধাসমূহ:
টিন সার্টিফিকেট নিলে যে আপনি শুধু সুবিধাই পাবেন বিষয়টা এমন নয়। আপনাকে বেশ কিছু ঝামেলাও পোহাতে হবে। এর একমাত্র অসুবিধা হচ্ছে আপনি যদি করযোগ্য আয়সীমার মধ্যে থাকেন তাহলেও আপনাকে রিটার্ণ দাখিল করতে হবে প্রতি বছর। আবার যদি আপনি করমুক্ত সীমার মধ্যেও থাকেন তাহলেও আপনাকে প্রতি বছর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। অথাৎ আপনি টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করলেই আপনাকে প্রতি বছর বিধি মোতাবেক রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। অবশ্য এভাবে আপনি যদি আপনার পরপর তিন বছর করযোগ্য আয় না থাকে তাহলে আপনি এর পর আর রিটার্ণ দাখিল না করলেও হবে। তখন আপনি চাইলে আপনার ফাইলটি বন্ধ করার আবেদনও করতে পারেন। তবে একবার ফাইল বন্ধ করলে আর পুনরায় চালু করণের কোন ব্যবস্থা নেই বল্লেই চলে।
টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি প্রয়োজন:
মূলত টিন সার্টিফিকেট করতে তেমন কিছুই প্রয়োজন হয় না। টিন সার্টিফিকেট করতে যা যা প্রয়োজন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
- জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর (অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- নিজ নাম (ইংরেজীতে দেওয়া প্রয়োজন)
- পিতা ও মাতার নাম (ইংরেজীতে প্রয়োজন)
- নিজের জন্ম তারিখ
- স্বামী/স্ত্রীর নাম (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- একটি সচল মোবাইল নম্বর / একটি সচল ইমেইল নম্বর
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
টিন সার্টিফিকেট করবেন কিভাবে:
টিন সার্টিফিকেট করবেন কিভাবে এবার আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো। টিন সার্টিফিকেট করতে প্রথমেই আপনাকে ভিজিট করতে হবে এনবিআর এর অফিসিয়াল ওয়েবপোর্টাল https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এ । এবার প্রথমে আপনাকে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্ট তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনি সাইন আপ ট্যাব এ ক্লিক করুন। এরপর আপনার একটি ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি প্রশ্ন, সচল মোবাইল নম্বর ইনপুট দিয়ে সাবমিট করুণ। এরপর আপনার মোবাইল ফোন এ একটি সিকিউরিটি কোড পাঠানো হবে। এবার আপনি আপনার মেসেজ এ প্রাপ্ত সিকিউরিটি কোডটি সার্ভারে বসিয়ে আপনার একাউন্টটি এপ্রো্ভ করে নিতে হবে। একাউন্ট এপ্রোভ হলে এবার আপনি আপনার পূর্বে বসানো ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। এরপর লগইন হলে আপনার একটি প্যানেল প্রদর্শিত হবে।
এবার আপনি TIN APPLICATION নামক ট্যাব এ ক্লিক করুন। এরপর আপনার সামনে একটি ফরম প্রদর্শন করানো হবে। এবার আপনি প্রথমে আপনার ব্যক্তিগত ফরম এ নিজের নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম তারিখ, স্বামী/স্ত্রী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বসিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার পূরণকৃত সকল তথ্যের একটি প্রিভিউ দেখিয়ে একটি নিউ ফরম শো করানো হবে। এরপর আপনি আপনার সকল তথ মিলিয়ে নিন। এবার যদি সকল তথ্য ঠিক থাকে এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ সঠিক থাকলে আপনার ছবি সম্বলিত একটি তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে এবার আপনি নিচের দিকে সাবমিট বাটন এ ক্লিক করুণ। সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার সামনে ১০ সংখ্যার একটি নম্বরযুক্ত সার্টিফিকেট প্রদর্শন করানো হবে। ব্যাস এটাই হলো আপনার টিন সার্টিফিকেট।
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করবেন কিভাবে:
হ্যা এতক্ষন আপনি টিন সার্টিফিকেট তৈরি করলেন। কিন্তু এটি কিভাবে আপনার হাতে পারেন। এটাই ভাবছেন তো। হ্যা এবার বলবো আপনি কিভাবে আপনার টিন সার্টিফিকেট টি হাতে পাবেন। আপনার সামনে যে টিন সার্টিফিকেট টি প্রদর্শন করানো হয়েছে তার নিচের দিকে ডাউনলোড নামক একটি বাটন রয়েছে। উক্ত বাটনে ক্লিক করলেই সার্টিফিকেট টি ডাউনলোড হয়ে যাবে। আবার আপনি চাইলে এটি সেন্ড টু ইমেইল ট্যাব এও ক্লিক করে ইমেইল করে নিতে পারেন ভবিষ্যতের জন্য। এবার আপনি আপনার ডাউনলোড করা সা র্টিফিকেটটি প্রিন্ট করে নিন। তাহলেই হয়ে গেল আপনার টিন সার্টিফিকেট।
শেষ কথা:
উপরোক্ত নিয়ম বা কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করলেই আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাবেন।তবে টিন সার্টিফিকেট শুধু তৈরি করলেই হবে না এরপর সরকারি বিধি মোতাবেক আপনার প্রতি অর্থ বছর শেষে অথাৎ ১লা জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে রিটার্ণ দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এভাবে আপনি একটি টিন সার্টিফিকেট খুলে সেটি পরিচালনা করতে পারেন। এ বিষয়ে যদি আরো জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আপনি মন্তব্য বক্সে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা যতদ্রুত সম্ভব আপনাকে জানানোর চেষ্টা করবো।