সোলার প্যানেল (Solar Panel) কি?
সোলার প্যানেল হচ্ছে রাসায়নিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্নের বিকল্প একটি মাধ্যম। অথাৎ সূর্য্যের তাপ কে ফটোভোলটাইক এ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার মাধ্যমই হলো সোলার প্যানেল। সোলার প্যানেল শক্তির উৎস হিসেবে সূর্যের আলোকে শোষণ করে। সোলার প্যানেল সূর্যের তাপশক্তি শোষণ করে বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করে। মূলত একটি গ্লাস লেয়ারের সাথে ইন্সুলেট লেয়ার এবং প্রতিরক্ষামূলক সীট এর সমন্বয়ে সোলার প্যানেল তৈরি হয়। যার উপর সূর্যের আলো পড়ে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। অথাৎ এক কথায় আমরা বলতে পারি সূর্যের তাপের সৌরশক্তি শোষণ করে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে এই সোলার সিস্টেম।
সোলার প্যানেল কত প্রকার?
সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনই হলো সোলার সিস্টেমের কাজ। এই সোলার সিস্টেম সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে অথাৎ দুই রকমে কাজ করে। তাই সোলার সিস্টেম সাধারণত দুই প্রকার।
যথা: ১) অনগ্রীড সোলার সিস্টেম ২) অফগ্রীড সোলার সিস্টেম
সোলার প্যানেল ব্যবহারের সুবিধা সমূহ
সোলার সিস্টেম ব্যবহারের অনেক সুবিধা বিদ্যমান। কারণ সৌর প্যানেল মূলত সৌরশক্তির উপর নির্ভর করে। ইটি রোদের চাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। সোলার প্যানেল বাড়ির ছাড়ে অথবা রৌদ্র পায় এমন জায়গায় রাখা যায় বা রাখতে হয়। এটি মূলত পরিবেশ বান্ধব শক্তির উৎস। এটি দীর্ঘ মেয়াদী এবং স্থায়ীও বটে। রাসায়নিক ভাবে তৈরি বিদ্যুৎ অনেক সময় ই থাকে না। অথাৎ আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রয়োজনের সময় আমরা বিদ্যুৎ পাই না। সেই সময় গুলোতে এই সৌর প্যানেল বা সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারি। যেমন ঘরের আলো, ছোট আকৃতির ফ্যান, লাইট প্রভুতি চালাতে পারি।
সোলার প্যানেল এর অসুবিধা সমূহ
সোলার প্যানেল ব্যবহারের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি এর অসুবিধাও বিদ্যমান। সোলার প্যানেল বসানোর সময় এককালীন অনেক টাকা খরচ হয়। এটি মূলত বাড়ির ছাদে বা ঘরের চালের উপর বাখতে হয়। যেখানে অনেকটা ফাকা জায়গা খেয়ে ফেলে। সৌর প্যানেল যেহেতু একমাত্র সূর্যের আরোর উপর নির্ভরশীল তাই যদি সূর্যের আলো না থাকে তাহলে এটি ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে শীতের দিন এবং বৃষ্টিরদিনগুলোতে প্রচুর ঝামেলায় পড়তে হয়। তবে অসুবিধা থাকলেও রাসায়নিক ভাবে তৈরি বিদ্যুৎ এর পাশাপাশি বাড়িতে একটি সোলার প্যানেল রাখলে খুবই উপকার হয়। সেই দিক বিবেচনায় সোলার প্যানেল এর অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি।
সোলার প্যানেল (Solar Panel) এর ব্যবহার
সোলার প্যানেল মূলত ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হয়। অথাৎ তাপশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে এই সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়। শুধুমাত্র সোলার প্যানেল দিয়ে কিছুই হয় না। সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে একটি প্যানেল এর সাথে বিদ্যুৎ বা চার্জ ধরে রাখার জন্য একটি ব্যাটারিও রাখতে হয়। অথাৎ সোলার প্যানেল দিয়ে ওই ব্যাটারি চার্জ করে ব্যবহার করা হয়।
ভাল সোলার প্যানেল কোনটা?
আপনি যদি সাধারণত ছোট আকারের ইনভার্টার ব্যাটারি চার্জ করার জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে চান তাহলে ১০ ওয়াট থেকে ৪০ ওয়াট এর সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারেন। এর বাহিরে যদি আপনি বিদ্যুৎ বিল কমাতে চান তাহলে আপনাকে বেশি এমপিআর যুক্ত ব্যাটারি নিয়ে বেশি ওয়াট এর সোলার প্যানেল নিতে হবে। অথাৎ আপনি আপনার ব্যাটারির কনফিগার অনুযায়ী ১০ থেকে ৪০ ওয়ার্ট আবার ৮০ ওয়াট ও পছন্দ করতে পারেন। এছাড়াও বেশি অ্যাপ্লায়েন্সগুলির জন্য ৩৩০ থেকে ৪৩০ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন।
সোলার প্যানেল এর দাম কত?
সোলার প্যানেল এর দাম সাধারণ ওয়াট প্রতি হয়ে থাকে। সাধারণত সোলার প্যানেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াট প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বা এর গুণগত মান এর দিকে যেগুলো আরো ভালো সেগুলো আরো একটি বেশি দারে বিক্রয় করে থাকে। তবে ভালো একটি কোম্পানীর জিনিস দাম একটু বেশি হলেও অবশ্যই সেটি টেকসই ও ভালো হয়।
সোলার প্যানেল ব্যবহারের আগে যা জানা খুবই জরুরী
সোলার প্যানেল শুধু ব্যবহার করলেই হবে না এর ব্যবহার সম্পর্কে বেশকিছু বিষয়ের দিকে খেয়ালও রাখতে হবে। তা না হলে খুব তাড়াতাড়িই একটি সোলার প্যানেল নস্ট হয়ে যায়। সোলার প্যানেল নষ্ট হওয়ার জন্য কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো।
সোলার প্যানেল নষ্ট হওয়ার কিছু কারণ:
সোলার প্যানেল এমন স্থানে বসাতে হবে যাতে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পায়। কেননা সোলার প্যানেল সূর্যের আলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত আলো থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। আমরা যদি সোলার প্যানেল সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় না রাখি তাহলে সোলারে সূর্যের তাপ এসে পৌছাবে না। যার দরুণ কোন বিদ্যুৎও উৎপন্ন হবে না। এভাবে যদি সোলার প্যানেল দিনের পর দিন ছায়াযুক্ত জায়গায় পড়ে থাকে তাহলে এটা অল্প দিনেই এর কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। তাই আমাদের উচিত ভালো রোদ পায় এরকম জায়গায় সোলার প্যানেল বসানো।
প্যানেল এর ওয়াট এর থেকে বেশি এমপিয়ার ব্যাটারি ব্যবহার করা:
বেশি এমপিয়ার এর ব্যাটারী ব্যবহারের কারণেও সোলার প্যানেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কারণ ব্যাটারি এবং সোলার প্যানেল মূলত কনফিগার করে বসাতে হয়। ধরুন আপনি ৫০ ওয়াট এর একটি সোলার প্যানেল বসালেন এবং তার সাথে ১৫০ ওয়াট এর ব্যাটারি যুক্ত করলেন। এখন ভাবুন সেটা কি কখনও লোড সঠিক ভাবে দিতে পারবে। অন্য আরেকটা বিষয় দিয়ে আমরা বুঝবো। ধরুন আপনি ৪০ কেজির একটা বস্তা একা আপনার মাথায় তুলে নিয়ে যেতে পারেন। এবার আপনাকে যদি ৮০ কেজির বস্তা মাথায় তুলে নিয়ে যেতে বলা হয় তাহলে কি আপনি পারবেন। আমার মনে হয় পারবেন না। ঠিক সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির কনফিগার একই রকম। অথাৎ সোলার প্যানেল যে লোড নিতে পারবে বা দিতে পারবে তার মাপ অনুযায়ী ব্যাটারি কনফিগার করতে হবে। তা না হলে সোলার প্যানেল অতিরিক্তি লোড এর ফলে অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ক্যাপাটিসির বেশি লোড দেওয়া:
সোলার প্যানেল ক্যাপাসিটির বেশি লোড দেওয়ার ফলে অনেক সময় বেশি ভালো পারফরম করতে পারে না। ফলে এটি অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায়।
রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাব:
পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাবেও সোলার প্যানেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যে বৃষ্টির মৌসুমে ঝড় বৃষ্টির সময় সোলার প্যানেল গাছের পাতা দিয়ে ডেকে গেছে। কিন্তু আমরা ভুলেও তাহা পরিষ্কার পরি না। পরিস্থিতিতে সোলার প্যানেল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পরিশেষে বলা যায় সোলার প্যানেল একটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিকল্প মাধ্যম এবং এটি ব্যবহারে অনেক খরচা কমানো সম্ভব। সোলার প্যানেল পরিবেশ বান্ধবও বটে। এর সামান্য কিছু অসুবিধা বিদ্যমান থাকলেও সুবিধাই বেশি। তবে সঠিক যত্ন তথা রক্ষনাবেক্ষন করলে এর উপকারিতাই বেশি।