ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা তাড়াশ সিরাজগঞ্জ জেলার একটি প্রান্তিক জনপদ। ধারণা করা হয় তাড়াশ ঐতিহাসিক চলনবিলের গর্ভ হতে জেগে ওঠা কোন দ্বীপ। অনেকের ধারণা মহারাজ রামকান্ত প্রসাদ ও মহারানী ভবানী দম্পতি তাদের একমাত্র কন্যা ‘তারাশংকরী দেবা’র’ নামানুসারেই দ্বীপটির নাম রাখেন- ‘তারাশংকরী’। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে কিছু অন্তবর্ণ লোপ পেয়ে নাম হয় ‘তাড়াশ’। আবার অনেক গবেষকের মতে তারাশংকরী দেবীর জন্মের অনেক পূর্বেই এই অঞ্চলের নাম তাড়াশ। এমন অনেক জনশ্রুতি রয়েছে যে, পূর্বে এ জনপদে ডাকাত বা দস্যু ছিল এবং তারা সন্ত্রাস করে বেড়াতো। আর এই সন্ত্রাস থেকেই ত্রাশ বা তাড়াশ নামের উৎপত্তি। তাড়াছাও বিল অঞ্চলে একসময় প্রচুর তাড়ট কাটা জন্মাত। অনেকে মনে করেন এই তাড়ট কাটা থেকেই তাড়াশ নামের উৎপত্তি রয়েছে। তবে এই লোকশ্রুতি বা কিংবদন্তির কোন ঐতিহাসিক কোন প্রমাণ নেই। অথাৎ তাড়াশ উপজেলার নামকরণের বিষয়ে সর্বজনগ্রাহ্য কোন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৩০০.০৭ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার চারদিক ঘিরে আছে উত্তরে বগুড়া জেলার শেরপুর, পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া, দক্ষিণে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর এবং পশ্চিমে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলা।
সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫১ কিলোমিটার পশ্চিমের এ তাড়াশ ব্রিটিশ আমল থেকেই থানা জনপদ হিসেবে প্রশাসনিক মর্যাদা পেয়েছে। ব্রিটিশ আমলে এটি পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার একটি অংশ ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তাড়াশ একটি উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক মর্যাদা পেয়েছে।
এ উপজেলার বুকে ঠাই দিয়েছে ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকা নিয়ে মোট ২৫৪টি গ্রাম।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে উত্তরবঙ্গের ঝুলিতে কিছুই নেই তা কি কখনও হয়। ১৯৭১ সালে তাড়াশের নওগাঁতেই সংঘঠিত হয়েছিল পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রায় ১১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা এখানে পাকবাহিনীদের বিরুদ্ধে যুক্ত করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়াও উপজেলা আমবাড়িয়া’য় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণকবর।
তাড়াশের নওগাঁয় এলে নজর কাড়ে হযরত শাহ শরিফ জিন্দানী (রাঃ) এর মাজার শরীফ।
বিস্তৃর্ণ মাঠে ফসলের হাঁসি
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষি
হ্যাঁ এ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। এখানে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ২৫,৪৯০ হেক্টর এর মতো। এখানে প্রায় অর্ধেক জমিতে বছরে একটি ফসল এবং বাকী অর্ধেক জমিতে বছরে দুটি করে ফসল ফলে।
প্রত্নতত্ব সম্পদ’ই বলি আর দর্শনীয় স্থান ই বলি সিরাজগঞ্জের এ তাড়াশ কিন্তু উভয় দিকেই সমৃদ্ধ। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে শোভা পায়- ঐতিহ্যবাহী চলনবিল, তাড়াশ জমিদার বাড়ি, বিনসাড়া বেহুলার কূপ বা জিয়ন কূপ, বারুহাস ইমাম বাড়া, কুসুম্বী বিবির বাংলা, গদাই সরকার মসজিদ, তাড়াশ নকুলেশ্বর শিব মন্দির, শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দির, গুল্টা খ্রিষ্টান ধর্মপল্লী উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র:
পাবনা জেলার ইতিহাস, রাধারমণ সাহা
তাড়াশের ইতিহাস, জর্জিয়াস মিলন
উইকিপিডিয়া
তাড়াশ উপজেলা ওয়েব পোর্টাল
বৃহত্তর পাবনা জেলার প্রত্নতত্ব জরিপ প্রতিবেদন, খালেকুজ্জামান
ব্যক্তিগত গবেষণা।