জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন পদ্ধতি (নতুন নিয়মে)


জাতীয় পরিচয়পত্র হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি জাতীয় পরিচয় পত্র। সাধারণ ১৮ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করা যায়। পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় প্রযুক্তিগত ও টেকনিক্যালয় সমস্যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রে কম বেশি অনেকেরই কিছু তথ্য ভুল রয়ে গেছে। এটি মূলত অনলাইন সার্ভর নির্ভর। অথাৎ অনলাইন ডাটাবেজে সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হয় এবং অনলাইন এর মাধ্যমেই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এর জন্য বেশ কিছু কাগজপত্রাদিও প্রয়োজন হয়। তবে সেটা বাড়িতে বসেই করা সম্ভব।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার পদ্ধতি সমূহ

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন সাধারণ দুটি পদ্ধতিতে করা যায়। যার একটি হলো সাধারণ স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনী ফরম-২ সংগ্রহণ পূর্বক তাহা যথাযথ ভাবে পূরণ করতঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করে অফিস রশিদ এর মাধ্যমে সংশোধন ফি জমা পূর্বক সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। তবে এটি একটু সময় সাপেক্ষে। কারণ অনেকেরই জাতীয় পরিচয় পত্র ভুল থাকায় আবেদনের চাপে এটি একটু বিলম্ব হয়। কারণ জমাকৃত কাগজপত্রাদি পংক্ষানুপংক্ষু ভাবে যাচাই বাছাই করেই কর্তৃপক্ষ এই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন কার্যক্রম নিষ্পন্ন করা হয়।

দ্বিতীয়ত অনলাইন মাধ্যমেও ঘরে বসে নিজে নিজে এই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধণ করতে পারবেন। হ্যা এটাও সম্ভব। বিগত ২ বৎসর যাবৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর নির্বাচন বিভাগ জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে সংশোধনের ব্যবস্থা করেছে।
 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কি কি কাগজ লাগে

সাধারণরত কি ভুল হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কি কি কাগজপত্রাদি লাগবে।নিম্নে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি উল্লেখ করা হলো। 
  • যদি নিজের নাম ভুল হয়ে থাকে এবং বাংলা ও ইংরেজী উভয় বানান ই ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার অনলাইন জন্মনিবন্ধন অথাৎ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভার্সন ই দাখিল করতে হবে। সাথে আপনার যদি একাডেমিক কোন সার্টিফিকেট থাকে অথাৎ জেএসসি অথা এসএসসি পাস তাহলে সেটাও দাখিল করতে হবে। অথাৎ পাকাপক্ক প্রমান ই প্রয়োজন যে আপনার ভুল হয়েছে।
  • আবার ধরুণ আপনার পিতা ও মাতার নাম অথবা যে কোন একটি ভুল হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে নিজের জন্মসনদ ও পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র এর কপি দাখিল করতে হবে।
  • যদি আপনি বিবাাহিত হন এবং আপনার স্বামী/স্ত্রীর নাম ভুল হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীর/স্ত্রীর নাম সংশোধনের জন্য তাহার জাতীয় পরিচয়পত্ররে কপি প্রয়োজন এবং সেই সাথে বিবাহ রেজিষ্টার এর কপি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
  • আবার আপনার যদি জন্ম তারিখ অথা রক্তের গ্রুপ ভুল হয়ে থাকে তাহলে ধরুন রক্ষের গ্রুপ সংশোধনের জন্য আপনার ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট প্রয়োজন। অথাৎ প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর ফি

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন তথ্যভেদে এর ফি বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন শুধুমাত্র নিজের একক কোন তথ্য সংশোধন এর ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩০/- (দুইশত ত্রিশ) টাকা। হবে এর সাথে আলাদা কিছু চার্জ প্রযোজ্য। যেমন ধরুণ এই ফি টা অনলাইন এ পরিশোধন এর কিছু মাধ্যম রয়েছে অথাৎ বিকাশ, রকেট নগদ এরকম। এই মাধ্যমগুলো মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে আলাদা কিচু চার্জ প্রয়োজ্য হয়। বেশি না সেটা ৬/- টাকার মতো। এই ফি শুধুমাত্র প্রথমবার সংশোধনের সময় কার্যকর।অথাৎ একবার সংশোধন করার পর যদি পুনরায় আবারও ভুল থেকে যায় এবং আপনি তা সংশোধনের আবেদন করেন তাহলে আপনার এই ফি ৩৪৫/- টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এখন আসি একক তথ্য ছাড়া। একক তথ্য ছাড়া উভয় তথ্য সংশোধন বলতে কি বোঝাচ্ছেন। উভয় তথ্য বলতে আপনি যদি নিজের নাম, জন্ম তারিখ, পিতা ও মাতার নাম এগুলো একক তথ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এটা ছাড়াও যদি আপনি স্বামী/স্ত্রীর নাম অথবা রক্তের গ্রুপ সংশোধন করতে চান তাহলে উপরে উল্লেখিত ফির সাথে আলাদা ভাবে আরো ১১৫/- টাকা যুক্ত হবে। অথাৎ ২৩০/- + ১১৫/- মিলে ফি পরিশোধ করতে হবে। 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর নিয়মাবলি

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন এর নিয়মাবলি নিম্নরূপ:
  • জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম ভিজিট করতে হবে নির্বাচন কমিশন এর অফিসিয়াল ওয়েব সার্ভার Services nidw gov bd এ। এখানে প্রবেশ করে আপনাকে রেজিষ্ট্রেশন নামক ট্যাব ওপেন করতে হবে।
  • এরপর প্রদর্শিত ফরম এ আপনার নিজের ভোটার আইডি/জাতীয়পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ এবং প্রদর্শিত ক্যাপচাটি পূরণ করে সাবমিট ট্যাব এ চাপ দিতে হবে। 
  • তাহলে এর পর যদি আপনার ভোটার আইডিতে যদি আগে থেকে কোন মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা থাকে তাহলে সেটির সামনে এবং পিছনের কিছু সংখ্যা দেখাবে। 
  • যদি আপনার সেই মোবাইলটি আপনার হাতে থাকে তাহলে সেন্ড মেসেজ এ চাপ দিতে হবে। তবে সেই মোবাইল নম্বর নাও থাকতে পারে আপনার। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মোবাইল নম্বর পরিবর্তনের একটা ব্যবস্থা রেখেছেন। 
  • যদি উক্ত মোবাইল নম্বর না থাকে তাহলে মোবাইল পরিবর্তন ট্যাব এ চাপ দিয়ে নতুন মোবাইল নম্বর বসিয়ে সামনের দিকে এগুন। 
  • তাহলে আপনার মোবাইল এ একটি গোপনীয় কোড এর বার্তা আসবে এবংএটি সচল থাকলে মাত্র ৬০ সেকেন্ড। অথাৎ এর মধ্যেই আপনাকে উক্ত কোডটি বসাতে হবে। 
  • আপনি সফল ভাবে কোডটি বসাতে পারলে এবার আপনার সামনে একটি বারকোড প্রদর্শন করানো হবে। 
  • এবার আনাকে উক্ত বার কোড ক্যান করে নিজের ফেজ ক্যান করতে হবে। 
  • উক্ত বার কোডটি টি ক্যান করতে নিচের লিংকের ক্যানার টি ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় এটি হবে না। NID Wallet ক্যানার টি এখানে পাবেন। 
  • আপনার যা কিছু ভুল হয়েছে এডিট নামক অপশন এ চাপ দিয়ে প্রয়োজনীয় ঘরে টিক চিহ্ন এ চাপ দিয়ে যা যা ভুল রয়েছে সেগুলো সঠিক ভাবে লিখতে হবে। 
  • তারপর সামনের দিকে এগোন। এরপর আসবে আপনার প্রয়োজনীয় সংশোধনী ফি এর প্রদর্শন। 
  • এবার আপনার যেই ফি দেখানো হয়েছে সেই পরিমাণ ফি বিকাশ, রকেট অথবা নগদ ব্যবহার করে সেই ফি প্রদান করতে হবে।
  • ফি প্রদান করা হলে এবার আপনি সামনের দিকে এগোন। 
  • এই পর্যায়ে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করতে হবে। 
  • অথাৎ ভুল গুলোর উপর যা যা প্রমাণ প্রয়োজন সেই হিসেবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ক্যান করে যথাযথ ভাবে আপলোড করতে হবে। 
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি আপলোড করা হলে এবার সাবটি বাটনে পেস করতে হবে। তাহলেই সংশোধনী আবেদন সম্পন্ন হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে

উপরোক্ত নিয়ম অনুসারে আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর আপনার আবেদনটি কর্তৃপক্ষের নিকট চলে যাবে। কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই অন্তে আপনার আবেদনটি নিষ্পন্ন হয়ে যাবে। নিষ্পন্ন হলে ১০৫ নম্বর থেকে আপনাকে মোবাইল ফোস এ ক্ষুদে বার্তা দিয়ে জানিয়ে দিবে। এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন হতে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিন অথবা ১ মাস পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। আবেদন সম্পন্ন হলে তখন আপনি পুনরায় আপনার প্রোফাইল এ প্রবেশ করে ডাউনলোড নামক অপশন থেকে আপনার সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্রটি নিয়ে নিতে পারবেন। তবে যদি সংশোধন ছাড় নাও দেওয়া হয় তাহলে ভয়ের কিছু নেই। আপনাকে ওই একই নম্বর থেকে এসএসএম এর মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি চাওয়া হবে এবং আপনার আবেদনটি আপনার নিকট পুনরায় বেক পাঠানো হবে। তখন আপনাকে আপনার প্রোফাইল এ ডুকে আবার তাদের চাহিত কাগজপত্রাদি আপলোড করে সাবমিট করে দিতে হবে। তাহলেই কর্তৃপক্ষ পুনরায় যাচাই বাছাই করে আপনাকে সংশোধন করে দিবে।

শেষ কথা

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর পদ্ধতি উপরে পূর্নাঙ্গ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আবেদন করতে কি কি কাগজপত্রাদি প্রয়োজন, কত টাকা ফি প্রদান করতে হয় এবং কত দিন সময় লাগতে পারে সব বিষয়গুলোই বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে কারো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। 

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad