ভাবনার দেয়ালে ২৬ পেরিয়ে
ভাবনার দেয়ালে ২৬ পেরিয়ে এখন ২৭।
দারিদ্রের ত্রিসীমানা পেরিয়ে যেতে পারিনি এখনও,
তবে অন্যের খোটা’র সীমানা পেরিয়েছি অনেক আগেই।
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই স্কুল জীবনের ইতি টেনে
বাস্তব কর্মক্ষেত্রে এসেছি।
সেখানেও নিজের খ্যাত ক্ষুন্ন হয়েছে অনেক।
এরপরও সবকিছু মেনে নিয়েই জীবনের পথচলা।
অনেক কষ্টে টাইপরাইটার কেনা।
এখন আমি কখনও কোর্টের সামনে
আবার কখনও কলেজ গেট এ টাইপরাইটার চালাই।
সারাজীবন শুধু নিজেই নিজের উপরকার এর কথা ভাবা হয়েছে-
অন্যের নয়।
জীবনেরে বেশিরভাগ সময়ই
বন্ধু-বান্ধব, ছোট ভাই, বড় ভাইদের নিকট থেকে সহায়তা নিয়েছি অনেক।
কিন্তু কখনও কাউকে সহায়তা করার ভাগ্য হয়নি আমার।
তবে প্রায় সময়ই তাদেরকে দেওয়া কথা রাখতে না পেরেও
ব্যর্থতার খাতায় প্রথম হয়েছি বহুবার।
দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম, সততা আর মানুষের ভালোবাসায়
এখন আমি আর কোর্টের বারান্দায় বা কলেজ গেট এ
টাইপরাইটার চালাই না।
মাথার উপরে ছাদ আলা টাইপরাইটার অফিস হয়েছে এখন আমার।
কিছুটা কষ্ট হলেও কোন রকমে আছি,
দিন মোটামুটি কেটে যাচ্ছে,
হয়তো যাবেও।
চলছে এভাবেই,,,,,,,আর,,,,,,কি।
মাথার উপরে ছাড় আসার পর থেকেই
বন্ধু-বান্ধব, স্নেহের, সম্মানীয় সকলকে
আমার টাইপরাইটার অফিসে স্বাগত জানিয়েছি।
চেষ্টা করেছি সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার।
নিজের অবস্থা বুঝে আপ্যায়নও করেছি যতটা সম্ভব।
তবে তা হয়তো তাদের ব্যক্তি জীবন
তথা পারর্সোনালিটির সাথে খাপ খায়নি কখনও।
সে যাই হোক সেটা তাদের ব্যাপার!
সময় এবং নদীর স্রোত যেমন কাহারো জন্য অপেক্ষা করে না,
ঠিক তেমনি দারিদ্রের ত্রিসীমানায় পড়ে থাকা
আমার মত মানুষদের জীবন সময় সময় একই রকম থাকে না।
প্রায় সময়ই জীবন বদলাতে থাকে এবং
বদলে যায়ও।
বেশির ভাগ সময়ই খারাপই এসে হাজির হয়,
ভালটা খুব কম সময়ই আসে।
এভাবেই ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে- সময়ও চলে যাচ্ছে।
তবে আমার টাইপরাইটার টা
এখনও আগের মতোই খট খট শব্দে চলছে।
এখনও বন্ধু-বান্ধব, স্নেহের, সম্মানীয়
সকলেই মাঝে মধ্যেই আমার টাইপরাইটার এর ছাদের নিচে আসে।
বসে।
গল্প করে।
আবার চলেও যায়।
কিন্তু কেন জানি আমি আর আগের মতো নেই।
সবাই বলে এখন আমার পরিবর্তন হয়েছে।
আমি অনেক বড় হয়ে গেছি!
আজকাল আমিও ভাবছি আমি কি সত্যিই বড় হয়ে গেছি?
হ্যাঁ,
আমি বড় হয়ে গেছি,
কারণ- দাারিদ্রের ত্রিসীমানা পেরোতে না পারলেও
মনের ত্রিসীমানা পেরিয়েছি।
টাইপরাইটার এর একঘেয়েমী শব্দে এখন অনুভব করি
এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক হলো- দারিদ্র।
যে কিনা নিজেই হাতে কলমে
জীবনের সব অলিগলি, অংক, হিসাব-নিকাশ শিখিয়ে দিয়ে যায়।
কখনও দারিদ্র দেখেনি যে,
সে যেন ভুল করেও দাবি করে না বসে
জীবনকে সে পুরোপুরি চেনে!
টাইপরাইটার এর খট খট শব্দটাও আজকাল একটু অন্যরকম মনে হয়!
তবে কি অর আজ ক্ষুধা লেগেছে।
ও তো একটা মেশিন, ওর আবার কিসের ক্ষুধা!
আসলে-
“ক্ষুধার শহরে নিয়মের কোন ব্যারিগেট নেই-
নেই কোন ভালোবাসার সূচীপত্রও
এখানে ক্ষুন্নিবৃত্তির নামই প্রার্থনা
ভাতের সাথেই শুধু প্রেম”।
-তাপস কুমার।