সময়টা ভার্সিটি জীবনের শেষের দিকে।
ইতো মধ্যেই বেশির ভাগ বন্ধু-বান্ধবী’ই ভার্সিটি জীবন শেষ করে
সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেছে
আবার কেউবা বিদেশ পাড়ি দিয়েছে।
কারো কারো এখনও ভার্সিটি জীবন শেষ না হওয়ার পেছনে
অন্য আরেকটা গল্প আছে
এদের কেউ কেউ নিয়মিত ভাবে পড়াশোনা করতে পারেনি-
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, অর্থনৈতিক তথা বিভিন্ন সমস্যার কারণে।
একেক জনের গল্প একেক রকম।
অনেক বন্ধু-বান্ধবী’ই কারো প্রেমে সিক্ত হয়ে
আবার কেউবা ঘটা করে বিয়ে করে দিব্যি সেটেল হয়ে গেছে।
কেউ কেউ এখনো আবার ভার্সিটি জীবনেই রয়ে গেছে।
এখনও ভার্সিটি জীবন শেষ না হওয়দের জীবনটা
এমন সময় হুট করে বদলাতে থাকে
আমরা কখনই বুঝতে পারি না কত্ত বড় হয়ে গেছি।
ঠিক এমন সময় কারো কারো পরিবারের একমাত্র আয় করা
পিতা নামক মানুষটির অবসরের সময় চলে আসে
অথবা পেশাগত দিক থেকে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
অথাৎ পরিবারের আয় এমন সময় অর্ধেকে নেমে আসে এবং
প্রতিনিয়ত খরচা বেড়েই চলে।
নিজের মধ্যে আপনাতেই ভাবনা কাজ করতে থাকে।
বাবার পকেট থেকে চুরি করে টাকা নেওয়া তো দূরের কথা
পরিবারের সার্বিক অর্থনীতির কথা ভাবলেই খারাপ লাগে।
এর মধ্যে আবার ভার্সিটির শেষ সেমিস্টার ফি’র বান্ডিলে বান্ডিলে টাকা
জমা দেওয়ার লাইনে দাড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তো আছেই।
দিন শেষে বাসায় ফিরে চোখের সামনে আসে সারাদিন কাজ করতে থাকা
মায়ের শরীরটাও যেন বয়সের কারণে একটু আধটু দূর্বল হয়ে পড়েছে।
সুপার ওম্যান মায়ের শক্তিও যেন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে।
এই বয়সে ৯৫% বন্ধু-বান্ধবও কমে যায়
অথাৎ দূরে চলে যায়।
যারা লাইফ নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস তারা পার্টটাইম জবে ঢুকে যায়
আবার কেউবা খুবই সামান্য পুঁজি নিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য
ক্ষুদ্রাকৃতির ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা করে।
আবার কেউবা সরকারি চাকুরি, বিসিএস এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আর যারা এসবের কোনটা করে না তারা বসে বসে শুধু চিন্তা করতে থাকে।
এই সময়টাতে পূর্বের স্কুল প্রাঙ্গণ, কলেজ ক্যাম্পাস
তথা ভার্সিটি জীবন শুরুর দিকের কথা বড্ড মনে পড়ে।
হুট হুট করে পরিচিত মুখগুলো আস্তে আস্তে কমতে থাকে
অনেকদিন পর পর দেখা হলে-
”আরে বন্ধু কি অবস্থা তোর-
আচ্ছা আসি রে একটু কাজ আছে আজেন্ট
অথবা
ফেইজবুক এ হাই, হ্যালো,,,,,, কেমন আছিস,,,,,,
তোর কি অবস্থা,,,,,,, ইত্যাদি ইত্যাদি
ব্যাস এতটুকুই।”
সময় যত বাড়তে থাকে কপালে-মুখে চিন্তার ছাপ লাগলে থাকে
আমার তো টাকা নাই বড় ব্যবসা করি করে করবো,
আমার তো ভালো ফলাফল না,,,,,,
মেধা নেই,,,,,, আমি কি সরকারি চাকুরি পাব,,,,
আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না,,,,,
আর বর্তমান সময়ে মেয়েদের কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই!
চারদিকে আত্মীয়স্বজন তখন মোটামুটি বিয়ের জন্যে
এক রকম আন্দোলন শুরু করে দেয়।
এদিকে গেলে ভাবি বলে দেওড়া বিয়ে করবে কবে
পছন্দের কেউ আছে নাকি, আমাকে বলতে পারো
ওদিকে গেলে কি বন্ধু বিয়ে খাওয়াবি কবে,,,,,,,
বন্ধু আমার কিন্তু ১ মেয়ে, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেল,,,,,।
বিয়ে করবি কবে, বিয়ে খাওয়াবি কবে শ্লোগানে
চারিদিকে শুধু মিছিল মিছিল আর মিছিল।
বর্তমানে বিয়ে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে
একটু শান্তিতে বিয়ে খাওয়া অথবা আনন্দ করা তারও সুযোগ নেই
এখন বিয়ে বাড়িতে বিয়ে খাইতে খুব কম মানুষই আসে-
বেশিরভাগ মানুষই নিজের ছেলে কিংবা দেবরের জন্যে
সাজুগুজু করা সুন্দরী মেয়ে ঠিক করতে আসে
এভাবেই বিয়েও হয়ে যাচ্ছে, সময়ও চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ ক্যারিয়ার নিয়ে অতি সিরিয়াস হওয়া ছেলেটার মাথায়
মধ্যরাতে চক্কর কাটে
আমার সময় কি তবে আসলেই চলে যাচ্ছে ?
সবকিছুর পরও এসব মিলিয়ে
আমরা যে কারো প্রেমে পড়ি না ব্যাপারটা তা নয়!
কারণ পূর্বের আনম্যাচিউর প্রেমের তিক্ত অভিজ্ঞা আর
বর্তমানের অনিশ্চিত ক্যারিয়ার
সব মিলিয়ে জীবন সমীকরণটা অসমাপ্তই রয়ে যায়।
-তাপস কুমার।
ভালো একটি লেখা
ReplyDelete